Skip to main content

১০ বছরের বেশি কেউ রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান থাকা উচিত নয়

ভূমিকা:

গণতন্ত্রের অন্যতম মূল স্তম্ভ হলো নির্দিষ্ট সময় পরপর নেতৃত্ব পরিবর্তনের সুযোগ নিশ্চিত করা। এটি একদিকে যেমন জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটায়, তেমনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ভারসাম্য বজায় রাখে। কিন্তু যখন কেউ দীর্ঘ সময় রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান হিসেবে ক্ষমতায় থাকেন, তখন সেই শাসনের মাঝে একঘেয়েমি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং স্বেচ্ছাচারিতা প্রবণতা দেখা দেয়। বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধরনের দীর্ঘমেয়াদি শাসনের বিরূপ প্রভাব অনেক বেশি প্রকট। এই জন্য বলা যায়১০ বছরের বেশি কেউ রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান থাকা উচিত নয়।

মূল বক্তব্য:

 

. ক্ষমতার অপব্যবহার স্বেচ্ছাচারিতা বাড়ে

যখন কেউ একটানা দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকেন, তখন চারপাশে এক ধরনের অনুগত গোষ্ঠী তৈরি হয়, যারা সত্য বলার সাহস হারায়। এতে শাসকের ভুল সিদ্ধান্তও প্রশ্নহীনভাবে কার্যকর হয়, ফলে রাষ্ট্রব্যবস্থায় স্বেচ্ছাচারিতা বাড়ে। বাংলাদেশে দীর্ঘকাল শাসনে থাকা নেতাদের ক্ষেত্রে এমন চিত্র দেখা গেছে।

. গণতন্ত্রের চর্চা বাধাগ্রস্ত হয়

গণতন্ত্রের মূল শক্তি হচ্ছে বিকল্প নেতৃত্বের সুযোগ তৈরি হওয়া। কিন্তু এক ব্যক্তির দীর্ঘ মেয়াদি শাসনে নির্বাচন ব্যবস্থা প্রভাবিত হয়, বিরোধী দল দমন হয়, ফলে গণতন্ত্র কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।

. নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয় না

যে দেশে একটি নেতৃত্ব দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকে, সেখানে নতুন প্রজন্মের মেধাবী উদ্ভাবনী নেতৃত্ব তৈরির সুযোগ সীমিত হয়। ফলে ভবিষ্যতে নেতৃত্ব সংকট দেখা দেয়।

. জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা কমে যায়

শাসক যখন জানে যে তার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য জনগণের সমর্থনের দরকার নেই বা সেটি ব্যবস্থার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত, তখন তার দায়বদ্ধতা কমে যায়। এতে জনগণের প্রকৃত চাহিদা উপেক্ষিত হয়।

. দুর্নীতি দলীয়করণ বেড়ে যায়

দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার ফলে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয়করণ বেড়ে যায়। প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগসবখানে পক্ষপাতিত্ব দেখা যায়। এটি একটি রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামোকে দুর্বল করে।

. বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর প্রাসঙ্গিকতা

বাংলাদেশে অতীতে বর্তমানেও দেখা গেছে, দীর্ঘমেয়াদি শাসনের ফলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, সংবাদমাধ্যম বিরোধী কণ্ঠ রোধ হয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। রাজনৈতিক সহিংসতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতার সংকোচন এবং প্রশাসনের দলীয়করণ এই দীর্ঘ শাসনের নেতিবাচক ফলাফল।

. প্রতিরোধী শক্তির অভাব সৃষ্টি হয়

একটি দীর্ঘকালীন শাসক চায় সব বিরোধী কণ্ঠ স্তব্ধ করতে। বাংলাদেশে বহুবার দেখা গেছে, বিরোধী দল, মিডিয়া, নাগরিক সমাজকে দমন করা হয়েছে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক নেতৃত্বের দ্বারা।

. ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য নির্বাচন ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ

বাংলাদেশে দেখা গেছে, দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকার জন্য নির্বাচন ব্যবস্থায় প্রভাব বিস্তার, আইন পরিবর্তন নির্বাচনী কমিশনকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এতে জনগণের প্রকৃত মতামত প্রতিফলিত হয় না।

উপসংহার:

একটি দেশের সুস্থ গণতান্ত্রিক টেকসই উন্নয়নের জন্য নেতৃত্বের পরিবর্তন নতুন নেতৃত্বকে সুযোগ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ১০ বছরের বেশি একজন ব্যক্তি রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্বে থাকলে তা গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, এবং জনগণের অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থাকে দুর্বল করে। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল গণতান্ত্রিক দেশে নেতৃত্বের মেয়াদে সীমা নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে করে দেশ এগিয়ে যেতে পারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ন্যায়ের পথে।

Comments

Popular Posts

Yoga offers physical and psychological wellness benefits for individuals.

What Is Lifestyle and Why It Matters in Everyday Life

Fiverr Affiliate Program : An Alternative to Amazon Associates